ইংরেজি Person শব্দের বাংলা অর্থ ব্যক্তি। লিটিল শব্দ Persona থেকে ইংরেজি Person শব্দটি গৃহীত হয়েছে। সাধারণ অর্থে প্রত্যেকটি মানুষকে ব্যক্তি বলে। কিন্তু আইন বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ব্যক্তি শব্দের অর্থ আরো ব্যাপক। অর্থাৎ আইনের দৃষ্টিতে মানুষ ছাড়া অন্য বস্তুও ব্যক্তি হিসেবে গণ্য হতে পারে।
ব্যক্তি:
ব্যক্তি সম্পর্কে আইন বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন মত লক্ষ্য করা যায় । নেতা উল্লেখ করা হলো:-আমি বিজ্ঞানী অধ্যাপক স্যামন্ড এর মতে, "আইন যাকে অধিকার ধারণ ও কর্তব্য পালন করতে সক্ষম বিবেচনা করে এরূপ সত্ত্বাকে ব্যক্তি বলে।"
আইন বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে" যে অধিকার ধারণ, সংরক্ষণ তথা কর্তব্য পালন করতে সক্ষম তাকে ব্যক্তি বলা হয়"।
ভারতের এক আদালতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, "হিন্দু আইন অনুসারে দেব দেবীর মূর্তি আইনুক ব্যক্তি । অতএব তারা সম্পত্তি ধারণ করতে পারে"
জেনারেল ক্লজেজ অ্যাক্ট - ১৮৯৭ এর ৪২ ধারা অনুযায়ী- 'ব্যক্তি' শব্দটি দ্বারা যেকোনো কোম্পানি, জনসমষ্টি বা সংগঠনমূলক সংস্থাকে বুঝাবে বা নিবন্ধনকৃত হোক বা না হোক।
পরিশেষে বলা যায়, যিনি অধিকার ধারণ করেন এবং সমাজের প্রতি কর্তব্য পালন করেন তাকে ব্যক্তি বলে।
১.২. ব্যক্তির শ্রেণীবিভাগ / কত প্রকার ও কি কি? আলোচনা কর।
ব্যক্তির শ্রেণীবিভাগ বা প্রকারভেদ:
ব্যক্তি দুই ধরনের হয়: ১) প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক ব্যক্তি , ২) আইনগত বা কৃত্রিম ব্যক্তি।
১) প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক ব্যক্তি: যিনি অধিকার ধারণ করেন এবং সমাজের প্রতি কর্তব্য পালন করেন তাকে ব্যক্তি বলে। আর যে ব্যক্তি প্রকৃতিগতভাবেই সৃষ্টি হয়েছে তাকে প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক ব্যক্তি বলে। যেমন- মানুষ।
২) আইনগত বা কৃত্রিম ব্যক্তি: যে ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবে তৈরি হয় না বরং মানুষ দ্বারা তৈরি হয় তাকে কৃত্রিম বা আইনগত ব্যক্তি বলে। যেমন স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা, কোন সংগঠন, কর্পোরেশন, কোন সংস্থা, রাষ্ট্র, ইত্যাদি।
যে বৈধ অধিকার ধারণ ও দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম তাকেই আইনগত ব্যক্তি বলা হয়।
প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক ব্যক্তি ও আইনগত বা কৃত্রিম ব্যাক্তি ছাড়া আরও দুই ধরনের ব্যক্তি আছে। ক) অজাত ব্যক্তি , খ) মৃত ব্যক্তি।
১.৩. আইনগত ব্যক্তি কে? কি ভাবে আইনগত/ কৃত্রিম ব্যাক্তি সৃষ্টি হয়?
আইনগত ব্যক্তি:
সাধারণ অর্থে সকল মানুষ ব্যক্তি হিসেবে গণ্য। কিন্তু আইন বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে প্রতিটি মানুষ ব্যক্তি হিসেবে গণ্য নয়। আইন বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে যিনি অধিকার ধারণ, সংরক্ষণ ও কর্তব্য পালন করতে সক্ষম তাকে ব্যক্তি বলা হয়। আর যে ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবে তৈরি হয় না বরং মানুষের দ্বারা তৈরি হয় তাকে কৃত্রিম বা আইনগত ব্যক্তি বলে। যেমন স্কুল, কলেজ।
অন্যভাবে বলা যায়, স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক ব্যক্তি ছাড়াও যে সকল ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান অধিকার ও কর্তব্য পালন করার যোগ্য তাকে আইনগত ব্যক্তি বলা হয়।
কিভাবে আইনগত ব্যক্তির সৃষ্টি হয়:
যিনি অধিকার ধারণ করেন এবং সমাজের প্রতি কর্তব্য পালন করেন তাকে ব্যক্তি বলে। দেখি দুই ধরনের হয়: প্রাকৃতিক স্বাভাবিক ব্যক্তি ও আইনগত বা কৃত্রিম ব্যক্তি। আইনগত বা কৃত্রিম ব্যক্তি: যে ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবে তৈরি হয়নি বরং মানুষ দ্বারা তৈরি হয়েছে তাকে কৃত্রিম আইনগত ব্যক্তি বলে। যেমন: কোন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা, কোন সংগঠন, কর্পোরেশন, কোন সংস্থা, রাষ্ট্র ইত্যাদি। যে বৈধ অধিকার ধারণ ও দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম তাকেই আইনগত ব্যক্তি বলে। আইনগত বা কৃত্রিম ব্যক্তি বিভিন্নভাবে সৃষ্টি হতে পারে।
যেমন-
১) সার্টিফিকেট দ্বারা: প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ মঞ্জুরীকৃত সার্টিফিকেট দ্বারা আইনগত বা কৃত্রিম ব্যক্তি সৃষ্টি করতে পারেন।
২) বিশেষ আইন দ্বারা: উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ প্রয়োজন মনে করলে বিশেষ আইনদারাও আইনগত বা কৃত্রিম ব্যক্তির সৃষ্টি করতে পারেন। ৩) ধর্মীয় বিশ্বাস দ্বারা: ধর্মীয় বিশ্বাস দাঁড়াও আইনগত বা কৃত্রিম ব্যক্তি সৃষ্টি হতে পারে।যেমন: মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির ইত্যাদি।
আইনের সহায়তা ছাড়া স্বাভাবিক ব্যক্তির অস্তিত্ব বজায় থাকে না। কৃত্রিম ব্যক্তির অস্তিত্বকাল সাধারণত: স্বাভাবিক ব্যক্তির অস্তিত্বকাল থেকে বেশি হয়। আইনের মাধ্যমে কৃত্রিম ব্যক্তির সৃষ্টি ও অবসান হয়।
১.৪. আইনগত ব্যক্তি বা জুরিস্টিক ব্যক্তি/ ব্যক্তি সমূহের শ্রেনীবিন্যাস/ শ্রেণীকরণ কর।
আইনগত ব্যক্তি বা জুরিস্টিক ব্যক্তির শ্রেণীবিন্যাস:
সাধারণ অর্থে সকল মানুষ ব্যক্তি হিসেবে গণ্য। কিন্তু আইন-বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে প্রতিটি মানুষ ব্যক্তি হিসেবে গণ্য নয়। আইন বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে যিনি অধিকার ধারণ, সংরক্ষণ ও কর্তব্য পালন করতে সক্ষম তাকেই ব্যক্তি বলা হয়। আর যে ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবে তৈরি হয় না বরং মানুষের দ্বারা তৈরি হয় তাকে কৃত্রিম বা আইনগত ব্যক্তি বলে। অন্যভাবে বলা যায় স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক ব্যক্তি ছাড়াও যে সকল ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান অধিকার ও কর্তব্য পালন করার যোগ্য তাকেই আইনগত ব্যক্তি বলা হয়।যেমন- রাষ্ট্র, এজেন্সি, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা, কোন সংগঠন, কর্পোরেশন, কোন সংস্থা, রাষ্ট্র ইত্যাদি।
আইনগত ব্যক্তি তিন শ্রেণীর হয়ে থাকে। ১) কর্পোরেশন, ২) প্রতিষ্ঠান এবং ৩) তহবিল বা সম্পত্তি ।
১) কর্পোরেশন: কোন দল বা শ্রেণি কাঠামো গঠনের মাধ্যমে যে ব্যক্তি সৃষ্টি করে তাকে কর্পোরেশন বলে। অপারেশন দুই ধরনের হতে পারে: একক কর্পোরেশন এবং সমষ্টিগত কর্পোরেশন ।
২) প্রতিষ্ঠান: আইনগত ব্যক্তি নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য হয়। যেমন- স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ইত্যাদি।
৩) তহবিল বা সম্পত্তি: বিশেষ তহবিল অথবা বিশেষ সম্পদ আইনগত ব্যক্তি হিসেবে গণ্য হয়। যেমন -দেউলিয়া ব্যক্তির সম্পদ।
১.৫. স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক ব্যক্তির সাথে আইনগত ব্যক্তি বা জুরিস্টিক বা কৃত্রিম ব্যক্তির মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় কর।
স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক ব্যক্তির সাথে আইনগত বা কৃত্রিম বা জুরিস্টিক ব্যক্তির মধ্যে পার্থক্য:
নিম্নে স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক ব্যক্তির সাথে আইনগত বা কৃত্রিম ব্যক্তির মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ করা হলো-
১) যে ব্যক্তি প্রকৃতগতভাবেই সৃষ্টি তাকেই স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক ব্যক্তি বলে। অন্যদিকে যে ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবে না বরং আইন দ্বারা তৈরি তাকে কৃত্রিম বা আইনগত ব্যক্তি বলে।
২) আইনের সহায়তা ছাড়া স্বাভাবিক ব্যক্তির অস্তিত্ব বজায় থাকে। কিন্তু আইনের সহায়তা ছাড়া কৃত্রিম ব্যক্তির অস্তিত্ব বজায় থাকে না।
৩) সাধারণ ব্যক্তির অস্তিত্বকাল সাধারণত কৃত্রিম ব্যক্তির অস্তিত্ব কাল অপেক্ষা কম হয়।অপরদিকে কৃত্রিম ব্যক্তির অস্তিত্বকাল সাধারণত স্বাভাবিক ব্যক্তির অস্তিত্ব কাল থেকে বেশি হয়।
৪) স্বাভাবিক ব্যক্তি আইনের সহায়তা ছাড়া কাজ করতে পারে। কিন্তু কৃত্রিম ব্যক্তির শুধু বৈধ প্রতিনিধির মাধ্যমে কাজ করতে পারে।
৫) স্বাভাবিক ব্যক্তির শারীরিক অস্তিত্ব থাকে। পক্ষান্তরে কৃত্রিম ব্যক্তির শারীরিক অস্তিত্ব থাকে না।
৬) স্বাভাবিক ব্যক্তিকে স্পর্শ করা যায়। কিন্তু কৃত্রিম ব্যক্তিকে স্পর্শ করা যায় না।
৭) স্বাভাবিক ব্যক্তি নিজে পরিচালিত হতে পারে। অন্যদিকে কৃত্রিম ব্যক্তি নিজে হতে পারে না। পরিচালক মন্ডলী দ্বারা পরিচালিত হয়।
৮) স্বাভাবিক ব্যক্তির মৃত্যুর মাধ্যমে অবসান হয়। পক্ষান্তরে কৃত্রিম ব্যক্তির আইনের মাধ্যমে অবসান হয়।
১.৫. চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অথবা রাষ্ট্র / সরকার কি আইনগত ব্যক্তি?
আইনগত ব্যক্তি হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়/ কোম্পানি/ রাষ্ট্র বা সরকার :
আইনের দৃষ্টিতে ব্যক্তির দুই ধরনের হয়। এক প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক ব্যক্তি, তুই আইনগত বা কৃত্রিম ব্যক্তি। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানই এক প্রকার আইনগত বা কৃত্রিম ব্যক্তি। কারণ যেকোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা যায় এবং যে কোন প্রতিষ্ঠান অন্যের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে।
আইন অনুযায়ী প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে যেহেতু এক প্রকার ব্যক্তি সেহেতু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অথবা সরকার একটি প্রতিষ্ঠান হওয়ার কারণে আইনগত ব্যক্তি বলা যায়।
সুতরাং বলা যায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু-
১) নিজে বাদী হয়ে অন্যের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে
২) বাদি হিসেবে অন্য কেউ তার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে,
৩) নিজ নামে সম্পত্তি ধারণ করতে পারে,
৪) যেকোনো সম্পত্তি ক্রয় বিক্রয় করতে পারে,
৫) শিক্ষাদানের মাধ্যমে কর্তব্য পালন করে/ জনগণের যেকোনো প্রয়োজন পূরণ করে / সমাজ সেবা করে।
সেহেতু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বা রাষ্ট্র বা সরকার একটি আইনগত ব্যক্তি।
১.৬. মৃত ব্যক্তি, অজাত ব্যক্তি ও নিকৃষ্ট প্রাণী বা পশুর আইনগত মর্যাদা আলোচনা করো।
মৃত ব্যক্তির আইনগত মর্যাদা:
কোন মানুষ মারা গেলে তিনি সকল কিছুর ঊর্ধ্বে চলে যান। অর্থাৎ তিনি যেমন কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করতে পারেন না তেমনি তার বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা যায় না। তার বৈধ ব্যক্তিত্বের অবসান ঘটে। তবে মারা যাওয়ার সাথে সাথেই তার সকল অধিকার শেষ হয়ে যায় না। মারা যাওয়ার পরও কিছু অধিকার ধারণ করেন। মৃত ব্যক্তির আইনগত মর্যাদা আলোচনা করা হলো:
কাফন দাফন বা সৎকার: কোন মানুষ মারা গেলে তার কাফন দাফন বা সরকারের ব্যবস্থা করতে হয়। এটি জীবিত মানুষের প্রতি মৃত ব্যক্তির অধিকার। ঋণ পরিশোধ: মৃত ব্যক্তির যদি কোন ঋণ থাকে তাহলে তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে তা পরিশোধ করতে হবে। এটি তার অধিকার। তবে মৃতের ঋণ যদি তার রেখে যাওয়া সম্পদের চেয়ে বেশি হয় তাহলে তার ওয়ারিশ বা উত্তরাধিগণ অতিরিক্ত অংশের জন্য দায়ী হবেন না।
বকেয়া বেতন: বকেয়া বেতনও এক প্রকার ঋণ। মৃত ব্যক্তির নিকট বেতন পাওনা থাকলে তা তার রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে পরিশোধ করতে হবে। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ছয় মাস পর্যন্ত পরিশোধযোগ্য হবে।
বৈধ ওসিয়ত বা উইল কার্যকর: মৃত ব্যক্তি যদি বৈধভাবে কোন উইল করে যান ( যেমন এক-তৃতীয়াংশের বেশি উইল না করা কোন ওয়ারিশকে উইল না করা ইত্যাদি) তাহলে তা কার্যকর করতে হবে। বৈধ উইল না করলে তার ওয়ারিশগণ তা মানতে বাধ্য নন।
নিন্দা না করা: মৃত ব্যক্তি সকল কিছু ঊর্ধ্বে চলে যান রাসূল (সা:) এর হাদীস অনুযায়ী" তার নিন্দা করা উচিত নয় কারণ তিনি তার কর্মফল পেয়ে গেছেন।"
আইনেও মৃত ব্যক্তির সুনাম অক্ষুন্ন রাখার বিধান আছে। অপরাধ আইন বা দন্ডবিধির ৪৯৯ ধারার প্রথম ব্যাখ্যা অনুযায়ী" কোন মৃত ব্যক্তিকে নিন্দা করা হলে তা মানহানির পর্যায়ে পড়বে, যদি উক্ত নিন্দাবাদ এরূপ হয় যে , তা মৃত ব্যক্তি জীবিত থাকলে তার জন্য মানহানি করে বল গণ্য হতো এবং উক্ত নিন্দাবাদ যদি মৃত ব্যক্তির পরিবার পরিজন বা আত্মীয়-স্বজনের মানে আঘাত দেওয়ার জন্য করা হয়ে থাকে।"
সুতরাং বলা যায় কোন ব্যক্তি মারা যাওয়ার সাথে সাথেই আইনগত মর্যাদা হারায় না।
অজাত ব্যক্তির আইনগত মর্যাদা:
যে ব্যক্তি এখনো জন্মগ্রহণ করেনি কিন্তু যার অস্তিত্ব আছে তাকে অজাত ব্যক্তি বলে। অর্থাৎ মাতৃগর্ভস্থ সন্তানকে অজাত ব্যক্তি বলে। আজাদ ব্যক্তি মৃত ব্যক্তির মত নয় বরং জীবিত ব্যক্তির মতোও নয়। ব্যক্তি সীমিত অর্থে অধিকার ধারণ করে। বিভিন্ন আইনে অজাত ব্যক্তির আইনগত মর্যাদা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
মুসলিম আইন- মুসলিম আইন অনুযায়ী অজার ব্যক্তির অনুকূলে দান করা যায় না। তবে আজাত ব্যক্তির অনুকূলে শর্তসাপেক্ষে উইল করা যায়। আর শর্ত হল উইলের তারিখ থেকে ৬ মাসের মধ্যে অজাত ব্যক্তিকে জীবিত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করতে হবে।
হিন্দু আইন- পূর্বে হিন্দু আইনে অজাত ব্যক্তির অনুকূলের দান বা উইল করা যেত না। হিন্দু আইনে অজাত ব্যক্তির অনুকূলে দান করা যায়।
ফৌজদারী কার্যবিধি- ফৌজদারী কার্যবিধি 1898 এর ৩৮২ ধারা অনুযায়ী গর্ভের সন্তান থাকা অবস্থায় কোন মহিলার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা যায় না। এই বিধান মূলত অজাত সন্তানের অধিকার স্বীকার করে নিয়েছে।
পরিশেষে বলা যায় অজাত ব্যক্তি যেহেতু জন্মের পূর্বে সম্পত্তির মালিকানা স্বত্ব লাভ করে সেতু সীমিত অর্থে অজাত ব্যক্তিকে আইনানুক ব্যক্তি বলা যায়।
নিকৃষ্ট প্রাণী বা পশুর আইনগত মর্যাদা:
নিকৃষ্ট প্রাণী বা পশু স্বাভাবিক বা মৃত ব্যক্তি বা অজাত ব্যক্তি কোন প্রকার ব্যক্তির নেয় আইনগত মর্যাদাশীল নয়। এরা সম্পূর্ণ আলাদা বৈশিষ্ট্যের। সাধারণত এদের কোন আইনানুগ নেই। নিকৃষ্ট প্রাণী বা পশু অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে গণ্য হয়। নিকৃষ্ট প্রাণী বা পশু যদিও মানুষের মতো কোনো কাজ করতে পারে তবুও তাদের কাজের জন্য কোন জবাবদিহিতা নেই। রূপ আইনানুগ বাধ্য বাদকতাও নেই। তারা কোন অন্যায় কাজ করলে সেটি আই অন্যায় বলে গণ্য হয় না বা তাদের শাস্তিও পেতে হয় না। অর্থাৎ নিকৃষ্ট প্রাণী বা পশুর কাজ আইনসিদ্ধও নয়। কৃষ্ণ প্রাণী পশুর একবার এই যে আইন অধিকার নেই তা নয়। সীমিত অর্থে তাদেরও আইনগত অধিকার আছে। যেমন- পশুদের প্রতি নির্দয় আচরণ ফৌজদারি অপরাধ। আবার ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলেও এমন করা উচিত নয়। সুতরাং বলা যায় নিকৃষ্ট প্রাণী বা পশু কোন আইনগত মর্যাদা নেই ঠিকই কিন্তু তাদের প্রতি নির্দয় আচরণ করা উচিত নয়।
উপসংহার- একসময় যাদের শুধু প্রাণ আছে তাদেরকে ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা হতো। কিন্তু প্রাণ না থাকলেও ব্যক্তি হতে পারে। কৃত্রিম ব্যক্তি ও প্রকৃত ব্যক্তির ন্যায় অনেক অধিকার ধারণ করে কিন্তু কৃত্রিম ব্যক্তির প্রকৃত ব্যক্তির নেয় সকল অধিকার ধারণ করে না।
0 Response to "ব্যক্তি, "
Post a Comment