-->
শাস্তি

শাস্তি

১.১  শাস্তি বলতে কি বুঝ? এর উদ্দেশ্য কি? 

কোন ব্যক্তি অন্যায় কাজ করলে তার জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে। আইনে নিষিদ্ধ কোন কাজ সম্পাদন করলে যে অন্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়, আবার আইনি যে কাজ করতে বলা হয়েছে সেই কাজ করা থেকে বিরত থাকলে অন্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়। এই সকল ক্ষেত্রেই শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। অপরাধ দমন এর জন্যই মূলত শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

শাস্তি কাকে বলে: কোন অন্যায়কারীকে তার অন্যায়ের জন্য যেই নিপীড়ন দেয়া হয় তাকেই শাস্তি বলে। এই নিপীড়ন শারীরিকভাবে হতে পারে আবার মানসিকভাবে হতে পারে। কোন অপরাধীকে পীড়ন ও যাতনা দেওয়ার দায়িত্ব সরকার বা রাষ্ট্রের। অর্থাৎ কোন অপরাধীকে তার অপরাধের জন্য শারীরিক বা মানসিক যে যাতনা দেওয়া হয় তাকেই পানিশমেন্ট বা শাস্তি বলে।


শাস্তির উদ্দেশ্য: 

ওদিকে কষ্ট দেওয়া শাস্তির মূল উদ্দেশ্য নয়। যে অন্যায় কাজ করবে তার প্রায়শ্চিত্য হওয়া প্রয়োজন। শাস্তি ভোগের মাধ্যমে অন্যায়কারীকে প্রায়শ্চিত্য করতে হয়। শাস্তি প্রদানের মূল উদ্দেশ্য হলো অপরাধকে নির্মূল করা বা নিয়ন্ত্রণ রাখা। ‌ অপরাধীকে শাস্তি প্রদান না করলে সমাজে রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা দেখা দিবে। তাফসীর ব্যবস্থার মাধ্যমে সমাজের শৃঙ্খলা বজায় রাখা হয় পাশাপাশি ভুক্তভোগীদের প্রতিকার প্রদান করা হয়।


বিভিন্ন মতবাদগুলো/ তত্ত্ব গুলি লিখ/ ব্যাখ্যা কর ‌। তুমি কি মনে কর যে, নিবৃত্তিমূলক শাস্তি ও সংশোধন মূলক শাস্তির মধ্যে সমন্বয় হওয়া উচিৎ?

শাস্তির মতবাদের সমন্বয় হওয়া উচিত: ১) দৃষ্টান্তমূলক ও নিভৃত মূলক শাস্তি: যে শাস্তি মাধ্যমে অপরাধীদের অপরাধ নিবৃত করার মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়ে থাকে দৃষ্টান্তমূলক বা নিবৃত্তি মূলক শাস্তি বলা হয়।

দৃষ্টান্তমূলক বা নিবৃত্তি মূলক শাস্তি দুইটি অর্থে ব্যবহৃত হয়। ১) অপরাধীকে কঠিন শাস্তি প্রদান করে সমাজের দৃষ্টান্ত স্থাপন করা। ২) মূলক শাস্তি প্রদান করে ওই শাস্তির পুনরাবৃত্তি রোধ করা। 

২) প্রতিরোধ মূলক শাস্তি: যে শাস্তির মাধ্যমে অপরাধীদের ভীতি প্রদর্শন করা হয় এবং অপরাধ করা থেকে বিরত রাখা হয় তাকে প্রতিরোধমূলক শাস্তি বলে। 

প্রতিরোধ মূলক শাস্তির ক্ষেত্রে অপরাধী কারারুদ্ধ বা আটক করার মাধ্যমে উক্ত অপরাধ পুনরায় করতে না পারে তার জন্য তাকে অক্ষম করে দেয়। এই মতবাদের মাধ্যমে সমাজ থেকে অপরাধ নিবৃত্তি করার চেষ্টা করা হয়। হযরত মূলক শাস্তির ক্ষেত্রে অপরাধ সংগঠিত হওয়ার পূর্বে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। ‌

সমন্বয়: কোন অপরাধীকে কষ্ট দেয়া শাস্তির মূল উদ্দেশ্য নয়। যে অন্যায় কাজ করবে তার প্রায়শ্চিত্ত হওয়া প্রয়োজন। ভোগের মাধ্যমে অন্যায়কারীকে প্রাশ্চিত্ত করতে হয়। শাস্তি প্রদানের মূল উদ্দেশ্য হলো অপরাধকে নির্মূল করা বা নিয়ন্ত্রণে রাখা। অপরাধীকে শাস্তি প্রদান না করলে সমাজে রাষ্ট্রের বিশৃঙ্খলা দেখা দিবে। শাস্তির ব্যবস্থার মাধ্যমে সমাজে শৃঙ্খলা বজায় রাখা হয় পাশাপাশি ভুক্তভোগীদের প্রতিকার প্রদান করা হয়। 

শাস্তি অপরাধীর অপরাধ সব পুনরূপে নির্মূল করতে পারেনা। অপরাধকে এক ধরনের অসুখ বলা যেতে পারে। ‌ আমি বিজ্ঞানীদের মতে শাস্তি দ্বারা অপরাধ নিয়ন্ত্রণ রাখা যেতে পারে। ্য সুতরাং শাস্তির বিকল্প প্রক্রিয়া হিসেবে খালাস স্থগিত সাজা এবং সংসদ কারাগারে প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। 

বলা যায় যে দৃষ্টান্তমূলক বা নিবৃত্তিমূলক শাস্তি এবং অপরাধমূলক বা নিবারণমূলক শাস্তির অবশ্যই সমন্বয় হওয়া জরুরী।


শাস্তির প্রকারভেদ বিভিন্ন প্রকার শাস্তির আলোচনা বা বাংলাদেশের প্রচলিত শাস্তি: 

নিম্নে বাংলাদেশের প্রচলিত শাস্তি উল্লেখ করা হলো: ১৮৬০ সালের দন্ডবিধির ৫৩ ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশে ৫ ধরনের শাস্তি প্রচলিত আছে। 

১) মৃত্যুদণ্ড: দন্ডবিধি অনুযায়ী বাংলাদেশে দশটি ক্ষেত্রে  মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। বাংলাদেশী সাধারণত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড ও কার্যকর করা হয়।  যতক্ষণ উক্ত ব্যক্তির মৃত্যু না হয় ততক্ষণ তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখা হয়। 

২) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড: যাবজ্জীবন কার জন্য অবশ্যই সশ্রম হবে। 

৩) কারাদণ্ড: কারাদণ্ড সশ্রম হতে পারে আবার বিন আশ্রমও হতে পারে। 

৪) সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরন: আদালত প্রয়োজন মনে করলে অপরাধের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণের নির্দেশ দিতে পারেন। 

৫) জরিমানা: বিভিন্ন অপরাধের জন্য আদালত অপরাধীকে জরিমানা করতে পারেন? 

উপরোক্ত পাঁচ প্রকার শাস্তি ছাড়াও কিশোর অপরাধীদের জন্য আরও দুই প্রকার শাস্তি রয়েছে যথা এক বেত্রাঘাত 2) রিফরমেটারীতে আটক। ৩) তবে এই দুই প্রকার শাস্তির দন্ডবিধির অন্তর্ভুক্ত নয়। 


বাংলাদেশের মৃত্যুদন্ড কি সাংবিধানিকভাবে বৈধ অথবা শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড এই বৈধ? 

দন্ডবিধি অনুযায়ী বাংলাদেশে দশটি ক্ষেত্রের মৃত্যু দন্ডের বিধান রয়েছে। অনেকে এই বিধানের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেন। আবার অনেকেই বিধান রাখার পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেন।   অনেক দেশের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। পৃথিবীর অনেক দেশে মৃত্যুদণ্ডের বিধান নেই। বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত মৃত্যুদণ্ডের বিপক্ষে বিভিন্ন মতামত প্রকাশ করেছে ‌

জন্য অবশ্যই একটি নিষ্ঠুর শাস্তি। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে ভিন্ন অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডের সঠিক শাস্তি বিবেচিত হয়। তবে বিভিন্ন প্রজন্মের বলা যায় মৃত্যুদন্ডের কার্যকর না করে বিভিন্ন শাস্তির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যেমন আমৃত্যু কার দন্ড। বাংলাদেশের ইতিমধ্যে অমৃত্যু কারাদণ্ড চালু হয়েছে। বাংলাদেশের দণ্ডবি জীবনী যে সকল ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে তা উল্লেখ করা হলো:

১) ধারা ১২১: বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা বা প্রচেষ্টা নেয়া।

২) ধারা ১৩২: বিদ্রোহের সহায়তা করলে এবং উক্ত সহায়তার ফলে বিদ্রোহ সংঘটিত হলে।

৩) ধারা ১৯৪: উদ্দেশ্যে কারো বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে এবং এর ফলে নির্দিষ্ট ব্যক্তির মৃতদের কার্যকর হলে।

৪) ধারা ৩০২ -; খুন করা। 

৫) ধারা ৩০৩: যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দনিত আসামি কর্তৃক খুন ( অন্যান্য ধারার বিকল্প শাস্তি আছে কিন্তু ৩০৩ ধারায় একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বিকল্প কোন শাস্তি নেই ্্

৬) ৩০৫- শিশু উন্মাদ ব্যক্তিকে আত্মহত্যা করতে পরিচিত করা।৭) ধারা 307: যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের দন্দিত আসামি কর্তৃক খুনের চেষ্টা আঘাত করা।

৮) ধারা ৩৯৬: ডাকাতি কালে খুন।৯! ধারা ৩২৬ এ (ইচ্ছাকৃতভাবে দুই চোখ উপড়ে ফেলা বা  দ্বারা মুখ বিকৃত করা

১০) ৩৬৪ : ১০ বছরের বয়সের কম এমন ব্যক্তিকে অপহরণ করা। 


0 Response to "শাস্তি"

Post a Comment

Ads