অধিকার
Friday, March 3, 2023
Comment
১.১ অধিকার কি?/ অধিকার বলতে কি বুঝ?
১.২. আইনগত অধিকারের অত্যাবশকীয়/ অপরিহার্য উপাদান গুলো কি কি?
১.৩. স্যামন্ড কিভাবে অধিকারের শ্রেণীবিভাগ করেছে তা ব্যাখ্যা কর।
১.৪. অধিকার ও কর্তব্য পরস্পর সম্পর্কযুক্ত আলোচনা কর।
২.১. মৌলিক অধিকার কি/ কাকে বলে ?
২.২. অধিকার ও মৌলিক অধিকারের মধ্যে পার্থক্য / সকল মৌলিক অধিকার কিন্তু সকল আইনগত অধিকার মৌলিক অধিকার নয়" - উক্তিটির যথার্থতা নির্ণয় / আলোচনা কর।
২.৩. আইনগত অধিকার এবং ন্যায় সঙ্গত অধিকারের মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য/ পার্থক্য নির্ণয় কর।
২.৪. আইনগত অধিকার এবং ন্যায় সঙ্গত অধিকারের মধ্যে বিরোধের ক্ষেত্রে কে কার উপর প্রাধান্য পাবে এবং কেন?
২.৫. লিখিত বিষয়গুলো সংজ্ঞা ও তাদের পার্থক্য নির্ণয় করো - ১) কায়েমী ( ভেসটেড) ও কনটিনজেন্ট ( দৈব / সম্ভাব্য ) অধিকার,
১.১ অধিকার কি?/ অধিকার বলতে কি বুঝ?
ইংরেজি RIGHT এর বাংলা প্রতিশব্দ অধিকার। অধিকারের মূল ভিত্তি হল আইন। একজনের জন্য যা অধিকার অন্যজনের জন্য তা কর্তব্য। অধিকার এমন একটি বিষয় যা লঙ্ঘন করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির প্রতি অন্যায় করা হয়েছে বলে বিবেচিত করা হয়। আইনত এটি দণ্ডনীয় অপরাধ। অন্যের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা সকলের কর্তব্য হিসেবে বিবেচিত।
অধিকার বা রাইট কাকে বলে:
বিভিন্ন আইন বিজ্ঞানী অধিকারের ভিন্ন ভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছে। নিম্ন তা উল্লেখ করা হলো- প্রফেসর স্যামন্ডের মতে, " বিচার কার্য পরিচালনার বিধি অনুসারে যে সকল স্বার্থ স্বীকৃত ও সংরক্ষিত থাকে তাকে অধিকার বলে।"
আই হেরিং-এর মতে, " আইন দ্বারা সংরক্ষিত সার্থকের অধিকার বলে।"
সুতরাং বলা যায়, যে স্বত্ব বা স্বার্থ আইন দ্বারা স্বীকৃত তাকে অধিকার বলে।"
১.২. আইনগত অধিকারের অত্যাবশকীয়/ অপরিহার্য উপাদান গুলো কি কি?
বৈধ বা আইন কত অধিকারের উপাদান:
নিম্নে বৈধ অধিকারের উপাদান উল্লেখ করা হলো:
১) আইনানুগ ব্যক্তি হতে হবে:যিনি অধিকার ধারন করবেন তাকে অবশ্যই আইনানুগ ব্যক্তি হতে হবে।
২) অন্যের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া: একজনের অধিকারের মধ্যে অন্যজনের কর্তব্য থাকে। যিনি কর্তব্য পালন করবেন তাকে অন্যের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।
৩) কোন কাজ করা বা বিরত থাকা: অধিকার ভোগ করতে হলে অন্য ব্যক্তির কোন কাজ করতে হয় বা কাজ থেকে বিরত থাকতে হয়।
৪) বিষয়বস্তুর উপর স্বত্ব থাকা: অধিকার ভোগ করতে হলে কোন বিষয়বস্তুর উপর মালিকের স্বত্ব থাকতে হবে।
৫) বিষয়বস্তুর সাথে সম্পর্ক থাকা: অধিকার ভোগ করতে হলে কোন বিষয়বস্তুর সাথে মালিকের কোনো না কোনো সম্পর্ক থাকতে হবে।
১.৩. স্যামন্ড কিভাবে অধিকারের শ্রেণীবিভাগ করেছে তা ব্যাখ্যা কর।
অধিকারের শ্রেণীবিভাগ বা স্যামন্ড প্রদত্ত অধিকারের শ্রেণীবিভাগ:
নিম্নে অধিকারের শ্রেণিবিভাগ উল্লেখ করা হলো-
১) সম্পূর্ণ এবং অসম্পূর্ণ অধিকার: যে অধিকার আইন দ্বারা স্বীকৃত ও বলবৎযোগ্য তাকে সম্পূর্ণ অধিকার বলে। আর যে অধিকার আইন দ্বারা স্বীকৃত কিন্তু বলবৎযোগ্য নয় তাকে অসম্পূর্ণ অধিকার বলে।
২) প্রকৃত এবং ব্যক্তিগত অধিকার: জনগণের উপর কর্তব্য আরোপিত হয় এমন অধিকার হলো প্রকৃত অধিকার এবং কোন ব্যক্তির উপর কর্তব্য আরোপিত হয় এমন অধিকারকে ব্যক্তিগত অধিকার বলা হয়।
৩) মালিকানা ভিত্তিক এবং ব্যক্তিগত অধিকার: কোন বস্তু বা ধন-সম্পদের উপর কোন ব্যক্তির অধিকার কে মালিকানা ভিত্তিক অধিকার বলে এবং কোন ব্যক্তির উপর কর্তব্য আরোপিত হয় এমন অধিকারকে ব্যক্তিগত অধিকার বলে।
৪) সাধারণ ও ব্যক্তিগত অধিকার: প্রত্যেক ব্যক্তি যে অধিকার ভোগ করে তাকে সাধারণ অধিকার বলে এবং কোন ব্যক্তির উপর কর্তব্য আরোপিত হয় এমন অধিকারকে ব্যক্তিগত অধিকার বলে।
৫) ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক অধিকার: যে অধিকার কোন ব্যক্তির কোন কাজ করার কর্তব্য আরোপিত হয় তাকে ধনাত্মক অধিকার বলে এবং যে অধিকার কোন ব্যক্তির কোন কাজ না করার কর্তব্য আরোপিত হয় তাকে ঋনাত্মক অধিকার বলে।
৬) প্রাথমিক এবং অনুমোদন সাপেক্ষে অধিকার: কোন কিছুর উপর কোন ব্যক্তির অধিকার থাকলে তাতে অন্যের হস্তক্ষেপ করার অধিকার থাকে না একে প্রাথমিক অধিকার বলে। আর প্রাথমিক অধিকার লঙ্ঘন করলে তা প্রতিবিধানের জন্য কোন ব্যক্তি যে আইনগত অধিকার লাভ করে তাকে অনুমোদন সাপেক্ষে অধিকার বলে।
৭) সকলের বিরুদ্ধে অধিকার এবং ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে অধিকার: যে অধিকার পৃথিবীর সকল মানুষের বিরুদ্ধে বলবৎ করা যায় তাকে সকলের বিরুদ্ধে অধিকার বলে এবং যে অধিকার ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে বলবৎ করা যায় তাকে ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে অধিকার বলে।
৮) রাষ্ট্রীয় অধিকার এবং আন্তর্জাতিক অধিকার: যে অধিকার রাষ্ট্রীয় আইন দ্বারা স্বীকৃত ব্যক্তি ভোগ করে তাকে রাষ্ট্রীয় অধিকার বলে। আর যে অধিকার আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা স্বীকৃত ব্যক্তি ভোগ করে তাকে আন্তর্জাতিক অধিকার বলে।
৯) প্রধান এবং অতিরিক্ত অধিকার: কোন ব্যক্তির উপর আরোপিত মূল অধিকারকে প্রধান অধিকার বলে এবং প্রধান অধিকার থেকে অন্য যে অধিকার সৃষ্টি হয় তাকে অতিরিক্ত অধিকার বলে।
১০) কায়েমী ( সম্ভাব্য) এবং ঘটনা সাপেক্ষে অধিকার: যে অধিকার কোন ঘটনা নিশ্চিত ঘটার সাপেক্ষে তৈরি হয় তাকে কায়েমী ( সম্ভাব্য) অধিকার বলে এবং যে অধিকার কোন ঘটনা অনিশ্চিত ঘটার সাপেক্ষে তৈরি হয় তাকে ঘটনা সাপেক্ষে অধিকার বলে।
১১) উত্তরাধিকার যোগ্য এবং উত্তরাধিকার অযোগ্য অধিকার: যে অধিকার কোন সম্পদের মালিকের মৃত্যুর পর শেষ হয়ে যায় না তাকে উত্তরাধিকার যোগ্য অধিকার বলে এবং যে অধিকার কোন সম্পদের মালিকের মৃত্যুর পর শেষ হয়ে যায় তাকে উত্তরাধিকার অযোগ্য অধিকার বলে।
১২) বৈধ এবং পক্ষপাতহীন অধিকার: ইংল্যান্ডের সাধারণ আইন দ্বারা প্রচলিত ও স্বীকৃত অধিকারকে বৈধ অধিকার বলে এবং চ্যান্সেরী আদালত কর্তৃক স্বীকৃত অধিকারকে পক্ষপাতহীন অধিকার বলে।
১.৪. অধিকার ও কর্তব্য পরস্পর সম্পর্কযুক্ত আলোচনা কর।
অধিকার ও কর্তব্যের সম্পর্ক:
নিম্নে অধিকার ও কর্তব্যের পারস্পরিক সম্পর্ক আলোচনা করা হলো:
অধিকার: যে সত্য বা স্বার্থ আইন দ্বারা স্বীকৃত তাকে অধিকার বলে। মানুষ জন্ম লাভ করার সাথে সাথেই অনেক অধিকার প্রাপ্য হয়। সমাজের প্রতি তার অনেক কিছু পাওনা হয়ে যায়। কোন ব্যক্তি বা কোন ব্যক্তির নিকট বা সমাজের নিকট আইনগতভাবে কোন কিছু পাওনা হলে উক্ত পাওনা কে অধিকার বলে।
কর্তব্য: অন্যের প্রতি যে কাজ করা বা না করা অবশ্যই করণীয় সেই কাজ করা বা বিরত থাকাকে কর্তব্য বলে। অর্থাৎ যে কাজ অবশ্যই করণীয় যা না করলে আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য হয় তাকে কর্তব্য বলে।
অধিকার ও কর্তব্য একটি অপরটির সাথে এমন ভাবে জড়িয়ে আছে যে একটি ছাড়া অন্যটির সাধন করা যায় না। সকল অধিকারের মধ্যেই কর্তব্য থাকে। আবার সকল কর্তব্যের মধ্যেও অধিকার থাকে। একটি না থাকলে অন্যটি আইনগত ভিত্তি থাকেনা। যেমন স্বাধীনভাবে রাস্তায় চলাচল করতে পারা একজনের অধিকার, আর অন্যদের কর্তব্য হল স্বাধীনভাবে চলতে তাকে বাধা-প্রদান না করা।
সুতরাং বলা যায় অধিকার ছাড়া কর্তব্যের যেমন অস্তিত্ব নেই। এমনি কর্তব্য ছাড়া অধিকারের কোন অস্তিত্ব নেই।
২.১. মৌলিক অধিকার কি/ কাকে বলে ?
ইংরেজি রাইট এর বাংলা প্রতিশব্দ অধিকার। আর ফান্ডামেন্টাল রাইটসের বাংলা অর্থ মৌলিক অধিকার। অধিকারের মূল ভিত্তি হলো আইন। একজনের জন্য যা অধিকার অন্যজনের জন্য তা কর্তব্য।
মৌলিক অধিকার কাকে বলে:
যে অধিকারগুলো মানুষের সুষ্ঠু এবং স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য অপরিহার্য, দেশের সংবিধান দ্বারা স্বীকৃত এবং আদালত দ্বারা বলবৎযোগ্য সেই অধিকারগুলোকে মৌলিক অধিকার বলে।
দেশের জনগণের ব্যক্তিত্ব ও প্রতিভা বিকাশের জন্য রাষ্ট্র যে সকল সুযোগ-সুবিধা প্রদান করেছে তাকে মৌলিক অধিকার বলে।
মৌলিক অধিকার একদিকে নাগরিকদের নিরাপত্তার বিধান করে অন্যদিকে তাদের কর্তব্য পরায়ন করে তোলে। মৌলিক অধিকার স্থায়ী প্রকৃতির হয়। সাধারণ আইন যেভাবে ইচ্ছা করলেই পরিবর্তন করা যায়, মলিক আইন সেভাবে ইচ্ছা করলেই পরিবর্তন করা যায় না। এই অধিকারগুলি দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানে লিখিত থাকে।
২.২. অধিকার ও মৌলিক অধিকারের মধ্যে পার্থক্য / সকল মৌলিক অধিকার কিন্তু সকল আইনগত অধিকার মৌলিক অধিকার নয়" - উক্তিটির যথার্থতা নির্ণয় / আলোচনা কর।
অধিকার ও মৌলিক অধিকারের পার্থক্য/ সকল মৌলিক অধিকার আইনগত অধিকার কিন্তু সকল আইনগত অধিকার মৌলিক অধিকার নয়- আলোচনা:
যে অধিকার দেশের প্রচলিত আইন দ্বারা স্বীকৃত তাকে আইনগত অধিকার বলে। আইনগত অধিকার আদালত মানতে বাধ্য। কারণ আইনগত অধিকার আইন দ্বারা স্বীকৃত। আইনগত অধিকার আদালতের নিকট অধিকার হিসেবে দাবি করা যায়।
অপরদিকে দেশের জনগণের ব্যক্তিত্ব ও প্রতিভা বিকাশের জন্য রাষ্ট্রপতি ও সুবিধাকে মৌলিক অধিকার বলা হয়। মৌলিক অধিকার দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রধান করে আবার তাদের কর্তব্য পরায়ণও করে তোলে। মৌলিক অধিকার সাধারণ সংবিধানে লিপিবদ্ধ থাকে । কিন্তু সকল আইনগত অধিকার সংবিধানে লেখা থাকে না।
পরিশেষে বলা যায় সকল মৌলিক অধিকার যেহেতু সংবিধানে লিপিবদ্ধ থাকে সেহেতু এইটি আইনগত অধিকারও বটে। আর আইনগত অধিকার সাধারণ আইন দ্বারা স্বীকৃত বিধায় তা মৌলিক অধিকার নয়।
২.৩. আইনগত অধিকার এবং ন্যায় সঙ্গত অধিকারের মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য/ পার্থক্য নির্ণয় কর।
আইনগত অধিকার ও ন্যায় সঙ্গত অধিকারের সাদৃশ্য:
আইনগত অধিকার ও ন্যায় সঙ্গত অধিকারের মধ্যে নিম্নোক্ত সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়:
প্রথমত: আইনগত অধিকার দ্বারা যেমন কোন বিষয়বস্তুতে কোন ব্যক্তির অধিকার সৃষ্টি করা হয় তেমনি ন্যায় সঙ্গত অধিকার দ্বারাও তেমন কোনো বিষয়বস্তুতে কোন ব্যক্তির অধিকার সৃষ্টি করা হয়।
দ্বিতীয়তঃ আইনগত অধিকার ব্যক্তি তার দখলীয় বস্তুটি পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আবার ন্যায়সঙ্গতভাবে অধিকারী ব্যক্তি ও তার দখলীয় বস্তুটি পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
আইনগত অথবা লিগেল অধিকার ও ন্যায় সঙ্গত অথবা ইকুইটেবল অধিকারের বৈশিদৃশ্য বা পার্থক্য:
১) যে অধিকার দেশে প্রচলিত আইন দ্বারা স্বীকৃত তাকে আইনগত অধিকার বলে। অন্যদিকে যে অধিকার চ্যান্সেরী আদালতে বলবৎ করা হতো তাকে ন্যায় সঙ্গত অধিকার বলে।
২) আইনগত অধিকার আদালত মানতে বাধ্য। পক্ষান্তরে ন্যায় সঙ্গত অধিকার আদালত মানতে বাধ্য নয়।
৩) আইনগত অধিকার আইন দ্বারা স্বীকৃত। অপরদিকে ন্যায় সঙ্গত অধিকার ন্যায়পরতা দ্বারা স্বীকৃত।
৪) আইনগত অধিকার আদালতের নিকট অধিকার হিসেবে দাবি করা যায়। কিন্তু ন্যায়সংগত অধিকার আদালতের নিকট অধিকার হিসেবে দাবি করা যায় না।
২.৪. আইনগত অধিকার এবং ন্যায় সঙ্গত অধিকারের মধ্যে বিরোধের ক্ষেত্রে কে কার উপর প্রাধান্য পাবে এবং কেন?
আইনগত অধিকার ও ন্যায়সংগত অধিকারের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে কে প্রাধান্য পাবে এবং কেন?
যে অধিকার দেশে প্রচলিত আইন দ্বারা স্বীকৃত তাকে আইনগত অধিকার বলে। আইনগত অধিকার আদালত মানতে বাধ্য। কারন আইনগত অধিকার আইন দ্বারা স্বীকৃত। পাশাপাশি আইনগত অধিকার আদালতের নিকট অধিকার হিসেবে দাবি করা যায়।
অপরদিকে, যে অধিকার চ্যান্সেরী আদালতে বলবৎ করা হতো তাকে ন্যায় সংগত অধিকার বলে। ন্যায় সঙ্গত অধিকার আদালত মানতে বাধ্য নয়। কারণ ন্যায় সংগত অধিকার আইন দ্বারা স্বীকৃত নয়। ন্যায় সংগত অধিকার আদালতের নিকট অধিকার হিসেবে দাবি করা যায় না।
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায় আইনগত অধিকার ও ন্যায় সঙ্গত অধিকারের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে অবশ্যই আইনগত অধিকার প্রাধান্য পাবে।
২.৫. লিখিত বিষয়গুলো সংজ্ঞা ও তাদের পার্থক্য নির্ণয় করো - ১) কায়েমী ( ভেসটেড) ও কনটিনজেন্ট ( দৈব / সম্ভাব্য ) অধিকার, ২) প্রাইমারি ও স্যাংসানিং অধিকারের পার্থক্য
কায়েমী ( ভেসটেড) ও কনটিনজেন্ট ( দৈব / সম্ভাব্য ) অধিকারের পার্থক্য
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ২১ ধারা অনুযায়ী-ভবিষ্যতে কোন ঘটনা ঘটতেও পারে আবার নাও ঘটতে পারে এমন অবস্থায় পরিপ্রেক্ষিতে যখন কোন সম্পত্তি হস্তান্তরের ফলে স্বার্থ সৃষ্ট হয় তখন তাকে সম্ভাব্য শর্ত বা শর্তসাপেক্ষে স্বার্থ বলে।
অর্থাৎ ভবিষ্যতে কোন অনিশ্চিত ঘটনা ঘটা অথবা না ঘটার উপর নির্ভর করে যে স্বার্থ সৃষ্টি হয় তাকে সম্ভাব্য শর্ত বা শর্তসাপেক্ষে স্বার্থ বলে।
পার্থক্য-
১) কোন নিশ্চিত ঘটনা ঘটার সাপেক্ষে কোন স্বার্থ সৃষ্টি হলে তাকে কায়েমি স্বার্থ বলে। আর ভবিষ্যতে কোন অনিশ্চিত ঘটনা ঘটা অথবা না ঘটার উপর নির্ভর করে যে স্বার্থ সৃষ্ট হয় তাকে সম্ভাব্য শর্ত বা শর্তসাপেক্ষে স্বার্থ বলে।
২) কাহিনী স্বার্থকে ইংরেজিতে vested interest বলে। এবং সম্ভাব্য শর্ত বা শর্তসাপেক্ষে স্বার্থকে ইংরেজিতে contingent interest বলে।
৩) সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ১৯ ধারায় কাইমি স্বার্থের বিধান উল্লেখিত হয়েছে। পক্ষান্তরে সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ২১ ধারায় সম্ভাব্য শর্ত বা শর্তসাপেক্ষে স্বার্থের বিধান উল্লেখিত হয়েছে।
৪) কায়েমী স্বার্থের ক্ষেত্রে কোন ঘটনা অবশ্যই ঘটবে। অপরদিকে সম্ভাব্য শর্ত বা শর্তসাপেক্ষে স্বার্থের ক্ষেত্রে কোন ঘটনা ঘটতেও পারে আবার নাও ঘটতে পারে।
৫) কায়েমি স্বার্থে প্রাপক চূড়ান্ত স্বার্থ হস্তান্তর করতে পারে। অপরদিকে সম্ভাব্য শর্ত বা শর্তসাপেক্ষে স্বার্থে প্রাপক চূড়ান্ত স্বার্থ হস্তান্তর করতে পারে না।
৬) কায়েমি স্বার্থ আদালতের ডিক্রি মূলে বিক্রি বা ক্রোক করা যায়। পক্ষান্তরে সম্ভাব্য শর্ত বা শর্তসাপেক্ষে স্বার্থ আদালতের ডিগ্রি মূলে বিক্রি বা ক্রোক করা যায় না।
৭) হস্তান্তরের তারিখ থেকেই কায়েমি স্বার্থ কার্যকর হয়। অন্যদিকে হস্তান্তরের তারিখ থেকে সম্ভাব্য শর্ত বা শর্তসাপেক্ষে স্বার্থ কার্যকর হয় না।
৮) কায়েমি স্বার্থের ক্ষেত্রে সম্পত্তির মালিকানা সম্পূর্ণ থাকে। কিন্তু সম্ভাব্য শর্ত বা শর্তসাপেক্ষে স্বার্থের ক্ষেত্রে সম্পত্তির মালিকানা সম্পূর্ণ থাকে না।
প্রাইমারি ও স্যাংসানিং অধিকারের পার্থক্য :
মানুষ বা নাগরিক কার্যক্রমের উদ্দেশ্য হলো অধিকার প্রয়োগ করা। আর এই অধিকার প্রাথমিক বা সাংসানিং অনুমোদন অধিকার হতে পারে। নিম্নে উভয়ের মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ করা হলো: -
১) প্রাথমিক অধিকারকে বান্ডিল হিসাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে যা কোন ব্যক্তির দ্বারা উপভোগ করা বিশেষ অধিকার। এবং অনুমোদন অধিকার হলো প্রতিকারমূলক অধিকার যা প্রাথমিক অধিকার থেকে জন্ম নেয়।
২) প্রাইমারি অধিকার যেমন: কোন ব্যক্তির স্বাধীনতা, সুরক্ষা এবং খ্যাতির অধিকার। অপরদিকে অনুমোদন অধিকার যেমন: কোন ব্যক্তির মানহানির ক্ষতি হলে তার প্রতিকার পেতে পারে।
৩) প্রাথমিক অধিকারকে বলা হয় বিশেষাধিকার। অন্যদিকে অনুমোদন অধিকার লঙ্ঘন হলে অনুমোদন অধিকারের উৎপত্তি হয়।
৪) প্রাথমিক অধিকারগুলো স্বতন্ত্রভাবে বিদ্যমান। কিন্তু অনুমোদন অধিকারের কোন স্বতন্ত্র অস্তিত্ব নেই।
৫) প্রাথমিক অধিকার প্রয়োগের বিষয় সুনির্দিষ্ট। অন্যদিকে অনুমোদন অধিকার প্রয়োগের বিষয়টি বিভাগীয়।
৬) প্রাথমিক অধিকার স্বতন্ত্রভাবে চলতে পারে। পক্ষান্তরে অনুমোদন অধিকার প্রাথমিক অধিকারের উপর নির্ভরশীল।
উপসংহার: বাংলাদেশের সংবিধানের তৃতীয় ভাগের ২৬ থেকে ৪৭ অনুচ্ছেদ পর্যন্ত বিভিন্ন মৌলিক অধিকার উল্লেখিত হয়েছে। বাংলাদেশের নাগরিকগণ সংবিধানের উল্লেখিত সকল মৌলিক অধিকার ভোগ করতে পারেন। তবে কিছু কিছু মৌলিক অধিকার বিদেশি নাগরিকর ভোগ করতে পারে। এই সকল মৌলিক অধিকারের কেউ অন্যায় ভাবে হস্তক্ষেপ করলে তা আইনত দণ্ডনীয় হিসেবে গণ্য হয়।
0 Response to "অধিকার"
Post a Comment