-->
আইনের উৎস, প্রকার, বর্ণনা, প্রথা, প্রকারভেদ, বিধিবদ্ধ আইন

আইনের উৎস, প্রকার, বর্ণনা, প্রথা, প্রকারভেদ, বিধিবদ্ধ আইন

১.১ আইনের উৎস কি? আইনের উৎস কত প্রকার হতে পারে? প্রত্যেক প্রকারের বর্ণনা দাও।  

১.২  প্রথা কি? একটি প্রথা কিভাবে আইনের ক্ষমতার অর্জন করে? আইনের উৎস হিসেবে প্রথা ও বিধিবদ্ধ আইনের তুলনা আলোচনা কর।


১.১ আইনের উৎস কি? আইনের উৎস কত প্রকার হতে পারে? প্রত্যেক প্রকারের বর্ণনা দাও।  

আইনের উৎস কাকে বলে ( Source of Law) : 
অবশ্য পালনীয় যে সকল ঘটনা থেকে মানুষের আচরণবিধি সূচনা হয় সেখান থেকেই আইনের উৎস সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন আইন বিজ্ঞানী আইনের উৎসের বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো- 
অধ্যাপক এলেন- এর মতে যার দ্বারা মানুষের আচরণবিধি আইনের মর্যাদা লাভ করে তাকেই আইনের উৎস বলা হয়। 

অধ্যাপক কেটেন - এর মতে বিচারকদের বিচার কার্যক্রমের মাধ্যমে যে সকল নিয়ম-কানুন আইনের মর্যাদা লাভ করে তাকে আইনের উৎস বলে। 

সুতরাং বলা যায়, মানুষের আচরণবিধির সূচনা হয় এমন ঘটনা যদি অবশ্য পালনীয় হয় তাহলে তাকে আইনের উৎস বলা হয়। 

আইনের উৎসের শ্রেণীবিভাগ: 
১) আইনের আনুষ্ঠানিক উৎস: আইনের কোন বিধি যার মাধ্যমে বৈধতা লাভ করে তাকেই আইনের আনুষ্ঠানিক উৎস বলে। 
২) আইনের বস্তুগত উৎস: যে ঘটনা থেকে আইন তার বৈধতা নয়, বরং বিষয়বস্তু অর্জন করে তাকে আইনের বস্তুগত উৎস বলে। বস্তুগত উৎস কে বিভিন্নভাবে ভাগ করা হয়েছে। নিম্নে আলোচনা করা হলো: 
ক) প্রথা- শুধু অতীত কাল থেকে সমাজে প্রচলিত কোন বিষয় যখন আইনের মর্যাদা লাভ করে তখন তাকে প্রথা বলে। আচার-আচরণ , রীতিনীতি থেকে প্রথা সৃষ্টি হয়। 
আইন বিজ্ঞানী জন অস্টিনের মতে, প্রথা হলো এমন আচরণ বিধি যা জনগণ সার্বভৌমের কারণে নয় স্বতঃস্ফূর্তভাবে মেনে চলে।"

২) নজির: নজির হলো আইনের একটি অন্যতম উৎস। চতুর আদালতের বিচারক গ্রহণ তাদের সুচিন্তিত অভিমত দ্বারা এক একটি নজির স্থাপন করেন। যে ক্ষেত্রে কোন সুনির্দিষ্ট আইন নাই, সে ক্ষেত্রে বিচারক গ্রহণ প্রচলিত আইনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে তাদের নিজস্ব অভিমত দ্বারা আইন প্রণয়ন করেন অথবা সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত প্রদান করেন। বিচারক গ্রহণ কর্তৃক প্রণীত এই আইন বা সিদ্ধান্ত পরবর্তী কোন মামলার জন্য নজিল হিসেবে কাজ করে।

৩) আইন প্রণয়ন: সার্বভৌম কর্তৃপক্ষ কর্তৃক স্বীকৃত অন্য কোন কর্তৃপক্ষের কর্তৃক আইন তৈরি করাকে আইন প্রণয়ন বলে। 

৪) চুক্তি: দিবা ততোধিক পক্ষ আইনসঙ্গত কোন কাজ করতে বা বিরত থাকার জন্য সম্মত হলে তাকে চুক্তি বলে। অন্যভাবে বলা যায় আইন দ্বারা বলবৎযোগ্য সম্মতিতে চুক্তি বলে। পারস্পরিক চুক্তি থেকে আইনের সৃষ্টি হয়। 

৫) ঐতিহাসিক উৎসব: যে উৎসগুলি আদালত কর্তৃক স্বীকৃত নয় তাকে ঐতিহাসিক উৎস বলা হয়।



১.২  প্রথা কি? একটি প্রথা কিভাবে আইনের ক্ষমতার অর্জন করে? আইনের উৎস হিসেবে প্রথা  ও বিধিবদ্ধ আইনের তুলনা আলোচনা কর।

অতি প্রাচীনকাল থেকেই উৎপত্তি ও ক্রম বিকাশে প্রথা একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। কবে যে কোন প্রথা আদালতে গ্রহণীয় হয় না একটি প্রথা আদালতে গ্রহণযোগ্য হতে হলে তাতে বৈধ প্রথার অপরিহার্য উপাদান থাকতে হয়। 

প্রথা ( Custom) কাকে বলে? মূলত: 
মানুষ দীর্ঘদিনের আচার ব্যবহার সম্পর্কিত অলিখিত আইনকে কথা বলে। কথা সম্পর্কে বিভিন্ন আইন বিজ্ঞানী বিভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। 
যেমন- প্রখ্যাত আইনবিজ্ঞানী জন অস্টিন বলেন, ' কথা হলো এমন একটি আচরণ বিধি যা জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে মেনে চলে। " প্রথা সম্পর্কে 

প্রিভি কাউন্সিল মন্তব্য করেন যে, " প্রথম সুস্পষ্ট প্রমাণ লিখিত আইনের চেয়ে শ্রেয়" 

গোপাল চন্দ্র সরকার শাস্ত্রী কথা সম্পর্কে বলেন," কথা হলো এমন একটি নিয়ম যা একটি পরিবার বা একটি জেলায় দীর্ঘদিন ধরে পালিত হওয়ার ফলে আইনে পরিণত হয়েছে" । 

পরিশেষে বলা যায় যে, প্রথম হলো এমন একটি রীতিনীতি যা সমাজে দীর্ঘদিন থেকে প্রচলিত থাকার কারণে আইনে পরিণত হয়।

প্রথার প্রকারভেদ কোন শ্রেণীবিভাগ:

প্রথাকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- আইনসম্মত বা রীতি সম্মত প্রথা।  ২) প্রচলিত বা প্রসিদ্ধ আইন। 

১) আইনসম্মত বা রীতি সম্মত প্রথা:  যে সকল প্রথা আইনের মতো বাধ্যতামূলক ব্যবহার হয় তাকে আইনসম্মত বা রীতি সম্মত কথা বলে। আইন সম্মত বাড়িতে সম্মত প্রথা শর্তসাপেক্ষে বৈধ হয়।

২) প্রচলিত বা প্রথা সিদ্ধ আইন আইন: বিশিষ্ট আইন বিজ্ঞানী সেমন্ডের মতে, প্রথাসিদ্ধ আইন,  আইনের সমতুল্য। এটি জনসাধারণের সামাজিক আচার ব্যবহারের অভিব্যক্তি মাত্র। এই আইন আবার দুই প্রকার। যেমন - আঞ্চলিক প্রথা, সাধারণ প্রথা। 


প্রথার বৈশিষ্ট্য অথবা বৈধ প্রথার উপাদান অথবা একটি প্রথাকে আইনের মর্যাদা পেতে হলে যে সকল স্বার্থ পূরণ করতে হয় বা অর্জন করতে হয়। 

সমাজে প্রচলিত যেকোনো বিষয়ে প্রথা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় না প্রধান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে কিছু বৈশিষ্ট্য থাকতে হয়। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো- 

১) সুপ্রাচীন: প্রধান অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এটি স্মরণাতীত কাল থেকে প্রচলিত হতে হবে। অল্প দিন পূর্ব থেকে প্রচলিত কোন বিষয়ে কথা মর্যাদা লাভ পারে না। 
২) যুক্তিসঙ্গত বিষয়: প্রথা কে অবশ্যই যুক্তিসঙ্গত বিবেচিত হতে হবে। যদি কোন বিষয় যুক্তি সঙ্গত না হয় বা সমাজের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয় তাহলে তা প্রথা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় না।
৩) দীর্ঘদিন প্রচলন থাকা: অল্প দিন সমাজে প্রচলিত কোন বিষয়ে প্রধা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় না । একটি প্রথাকে আইনের উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে হলে দীর্ঘদিন প্রচলিত থাকতে হবে।
৪) নিশ্চয়তা: প্রথাটি আইনের উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে অবশ্যই সুনিশ্চিত হতে হবে। 
৫) আইন পরিপন্থী নয়: কথা কোন বিধিবদ্ধ আইনের পরিবর্তী হবে না বিধিবদ্ধ আইনের পরিবর্তী হলে তা আইনের উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় না।
৬) নৈতিকতার বিরোধী নয়: কথা কখনোই নৈতিকতা বিরোধী বিষয় হবে না। নৈতিকতা বিরোধী হলে তা আইনের উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় না। 
৭) তথ্যভিত্তিক হওয়া: কথা হিসেবে পরিচিত হতে হলে কোন বিষয়কে অবশ্যই তথ্যভিত্তিক হতে হবে। অবাস্তব কোন বিষয়ে কথা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় না।
৮) প্রমাণিত বিষয় হওয়া: প্রথম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে কোন বিষয়কে অবশ্যই প্রমাণিত হতে হবে। দ্বারা প্রমাণিত বিষয় ছাড়া কোন বিষয়ে কথা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় না।
উপযুক্ত বিষয়ের সমূহ পূরণ হলে একটি প্রথা আইনের উৎস হিসেবে বিবেচিত হবে।


বিধিবদ্ধ আইনের তুলনামূলক আলোচনা: 
আইনসভা কর্তৃক প্রণীত আইন হলো বিধিবদ্ধ আইন। আইন আইনের অন্যতম একটি উৎস। সমাজের পরিবর্তন সাধনের জন্য বিধিবদ্ধ আইন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিধিবদ্ধ আইন সৃষ্টি হয় রাষ্ট্র থেকে। 

অন্য আইন যেমন প্রথা সৃষ্টি হয় সমাজ থেকে , আর নজির সৃষ্টি হয় আদালতের মাধ্যমে,  প্রথা আইনের মর্যাদা লাভ করতে দীর্ঘদিন সময় লাগে, কিন্তু বিধিবদ্ধ আইন একদিনের মধ্যেই আইন সভার মাধ্যমে আইনের মর্যাদা লাভ করতে পারে।

প্রকৃতপক্ষে প্রথা নজির ও বিধিবদ্ধ আইন সবগুলোই প্রয়োজন রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে আছে যেখানে প্রথা অনর অবস্থানে থাকে কিন্তু পরিবর্তন দরকার। সে ক্ষেত্রে বিধিবদ্ধ আইন দ্বারা উক্ত সমস্যার সমাধান করতে হয়। আবার যেখানে আইন নেই সেখানে প্রথা বা নজির আইন হিসেবে কাজ করে।

0 Response to "আইনের উৎস, প্রকার, বর্ণনা, প্রথা, প্রকারভেদ, বিধিবদ্ধ আইন"

Post a Comment

Ads