-->
ঝুঁকি এড়াতে প্রাথমিকে দ্বিতীয় শ্রেণি বাদ

ঝুঁকি এড়াতে প্রাথমিকে দ্বিতীয় শ্রেণি বাদ

ঘোষণা ছিল, আগামী বছর মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণি এবং প্রাথমিকের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। এজন্য চারটি শ্রেণির পাইলটিং (পরীক্ষামূলক শ্রেণি কার্যক্রম) ৬৫টি করে বিদ্যালয়ে হবে চলতি বছর। পাইলটিং থেকে প্রাপ্ত ভুলত্রুটি সংশোধন শেষে আগামী বছর চারটি শ্রেণির সব শিক্ষার্থীর হাতে নতুন শিক্ষাক্রমের বই তুলে দেওয়া হবে। এভাবে সামনের বছরগুলোতে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হবে।

কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, প্রাথমিকে পাইলটিং ছাড়াই আগামী বছর চালু হচ্ছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর ঝুঁকি এড়াতে বাদ দেওয়া হয়েছে দ্বিতীয় শ্রেণি। আগামী বছর সরাসরি প্রথম শ্রেণির সব শিক্ষার্থীকে নতুন শিক্ষাক্রমের বই দেওয়া হবে। তবে মাধ্যমিকে পাইলটিং শেষে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমের বই শিক্ষার্থীদের তুলে দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

আরো পড়ুনঃ অনুপস্থিত প্রাথমিক শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার নির্দেশ

জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান সম্প্রতি শিক্ষা ডটকমকে বলেন, ‘আগামী বছর পুরো সময়টাকেই আমরা পাইলটিং হিসেবে ধরছি। সেখান থেকে আমরা যেসব সমস্যা পাব তা ২০২৪ সালে ঠিক করা হবে। ইতিমধ্যে আমাদের নতুন শিক্ষাক্রমের বই তৈরি হয়েছে। শিক্ষক নির্দেশিকাও তৈরির কাজ শেষের পথে। এটা শেষ হলেই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হবে।’

আরো পড়ুনঃ শিক্ষককে পদোন্নতিতে ৯ পরীক্ষায় পাস লাগবে

সূত্র জানায়, মাধ্যমিকের সঙ্গে গত ফেব্রুয়ারি থেকে ৬৫ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পাইলটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আগের সচিব নতুন শিক্ষাক্রমের বই তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ছাড়ে গড়িমসি করেন। যেখানে জানুয়ারিতে অর্থ পাওয়ার কথা সেখানে নতুন সচিব আসার পর মে মাসে প্রয়োজনীয় অর্থ পায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এরপরও জুলাই-আগস্ট মাস থেকে পাইলটিং শুরু করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু সেটাও সম্ভব হয়নি।

আরো পড়ুনঃ প্রধান শিক্ষিকা কান ধরে ওঠবস করালেন সহকারী শিক্ষিকাকে

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পাইলটিং করার জন্য কমপক্ষে ছয়মাস সময়ের প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের কমপক্ষে চারমাস পড়ানোর পর পরিমার্জনের জন্য আরও দুই মাস সময় প্রয়োজন। কিন্তু এখন পাইলটিংয়ে গেলে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে জানুয়ারির প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া যাবে না। আবার যেহেতু আগামী বছর থেকে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করার ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ঐকমত্য আছে, সেজন্য ঝুঁকি এড়াতে শুধু প্রথম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করা হবে। অর্থাৎ সরাসরি নতুন শিক্ষাক্রম চালু করতে গিয়ে কোনো সমস্যা হলে তা যেন দুই শ্রেণিতেই না হয়। দ্বিতীয় শ্রেণিতে আগামী বছর পাইলটিং শেষে ২০২৪ সালে চালু করা হবে।

আরো পড়ুনঃ ছয় শিক্ষার্থী পড়িয়ে বেতন তুলছেন তিন শিক্ষক!

এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান শিক্ষা ডটকমকে বলেন, ‘প্রাথমিকে ১৯৯২ সাল থেকেই যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম চালু আছে। ইতিমধ্যে তিনবার এর সংস্কার হয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রমও কিছুটা যোগ্যতাভিত্তিক। শিক্ষকদেরও এ ব্যাপারে আগে থেকেই জানাশোনা আছে। ফলে আশা করছি, আগামী বছর নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে প্রাথমিকে কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না। তবে মাধ্যমিকে কিন্তু পাইলটিং অপরিহার্য ছিল। কারণ তারা আগামী বছরই প্রথম যোগ্যতাভিত্তিতে ঢুকছে।’

অধ্যাপক রিয়াজুল হাসান আরও বলেন, ‘আমরা আগামী বছর শুধুমাত্র প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নতুন কারিকুলামের (শিক্ষাক্রম) বই দেব। বলতে পারেন, আগামী বছরটাই আমাদের জন্য পরীক্ষামূলক। এরপরও যেসব বিদ্যালয়ে পাইলটিং হওয়ার কথা ছিল, আগামী বছর সেগুলোতে হবে। সেসব বিদ্যালয়ের প্রতি বিশেষ নজর রাখা হবে। আর সারা দেশের মতামত শেষে ২০২৪ সালে আমরা পরিমার্জিত বই তুলে দিতে পারব।’

জানা যায়, নতুন শিক্ষাক্রম চালু উপলক্ষে মাধ্যমিকে এ বছরের ডিসেম্বরে ৪ লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে মাস্টার ট্রেইনার তৈরির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তারা দেশের ৫২০ উপজেলায় প্রত্যেক বিষয়ে ৩ জন করে ট্রেইনার তৈরি করবেন। এরপর তারা একযোগে প্রান্তিক পর্যায়ের শিক্ষকদের আগামী ১৭ ডিসেম্বর থেকে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত উপজেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণ দেবেন।

প্রাথমিকের প্রশিক্ষণের বিষয়ে এনসিটিবির সদস্য ড. রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘আমরা এনসিটিবি থেকে কো-ট্রেইনার ও মাস্টার ট্রেইনার তৈরি করে দেব। এরপরের কাজ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ট্রেইনার তৈরি করবে। এরপর ডিসেম্বরেই একযোগে সব প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ পাবেন। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংখ্যা চার লাখের কম। এর বাইরে কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা রয়েছেন। সব মিলিয়ে এ সংখ্যা সোয়া ৫ লাখ থেকে সাড়ে ৫ লাখ হতে পারে। সবাইকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে।’

এনসিটিবি সূত্র জানায়, আগামী বছর প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হবে। ২০২৪ সালে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি এবং অষ্টম ও নবম শ্রেণি এ শিক্ষাক্রমের আওতায় আসবে। ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণি যুক্ত হবে। ২০২৬ সালে একাদশ ও ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। নতুন শিক্ষাক্রমে শিখনকালীন মূল্যায়নে জোর দেওয়া হয়েছে। প্রাক-প্রাথমিক পর্যায় থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শতভাগ শিখনকালীন মূল্যায়ন থাকছে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের কোনো পরীক্ষায় বসতে হবে না। অন্যান্য শ্রেণিতে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত শিখনকালীন মূল্যায়ন থাকবে।

------------------------------

শিক্ষা ডটকমের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন


প্রাইমারি, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা, বৃত্তি, উচ্চশিক্ষা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি সংবাদ শিরোনাম, প্রতিবেদন, বিশ্লেষণ, ছবি, ভিডিও পেতে শিক্ষা ডটকমের ফেইসবুক গ্রুপে ফলো করুন ( ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে )।


শিক্ষা ডটকমের ফেইসবুক পেইজঃ শিক্ষা - Shikkhaa.com | Facebook


0 Response to "ঝুঁকি এড়াতে প্রাথমিকে দ্বিতীয় শ্রেণি বাদ"

Post a Comment

Ads