শিক্ষা ভাতার টাকা ফেরত দিয়েছেন সেই নিঃসন্তান প্রধান শিক্ষক!
শিক্ষা ডটকমে সংবাদ প্রকাশের ১ দিন পর গাজীপুরের সদর উপজেলার সিংড়াতুলি শহিদ আহসান উল্লাহ মাস্টার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সেই প্রধান শিক্ষক শিক্ষা ভাতার অতিরিক্ত টাকা সরকারের কোষাগারে ফেরত দিয়েছেন। এর আগে দুইজন শিক্ষার্থীর নাম ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে সন্তানের শিক্ষা ভাতা গ্রহণ করে আসছিলেন জালাল উদ্দিন নামের ওই নিঃসন্তান প্রধান শিক্ষক।
সকালের দিকে টাকা জমা দেওয়ার বিষয়টি বিকালে শিক্ষা ডটকমে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার শামীম আহমেদ।
আরো পড়ুনঃ প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার ঘুষ নেয়ার ভিডিও ফাঁস
তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষকের দুই সন্তানের কাগজপত্র জমার কারণে এতদিন বিধি অনুযায়ী তিনি শিক্ষা ভাতা নিয়েছেন। সন্তান না থাকার পরও ভাতা নেওয়ায় তিনি অপরাধী। এখন তিনি ভুল বুঝতে পেরে টাকা জমা দিয়েছেন। এছাড়াও বিষয়টি তদন্তের জন্য ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছে জেলা শিক্ষা অফিসার। তদন্তের পর রিপোর্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে প্রেরণ করা হবে।
জানা যায়, ২০১০ সালের ৭ ডিসেম্বর স্কুলটিতে যোগদান করেন জালাল উদ্দিন। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত ওই শিক্ষক মো. সুজন ও মো. সুমন নাম ব্যবহার করে শিক্ষা ভাতা নিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা ডটকমে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ হলে চারদিকে জানাজানি হয়। পরে নিজের অপরাধ স্বীকার করে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সোনালী ব্যাংকের গাজীপুর কোর্ট বিল্ডিং শাখায় ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা জমা দেন।
আরো পড়ুনঃ আলোচিত সেই স্কুলশিক্ষিকা বহিষ্কার
এ বিষয়ে সিংড়াতুলি শহিদ আহসান উল্লাহ মাস্টার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জালাল উদ্দিনকে শিক্ষা ডটকমে বলেন, নিজের কাঁধে কাঠ-বাঁশ দিয়ে এ স্কুল শুরু করেছি। মাটি কেটেছি। যদিও শিক্ষা ভাতার টাকা গ্রহণ করা আমার ভুল হয়েছে। সেই টাকা আমি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়েছি।
তিনি শিক্ষা ডটকমে আরও বলেন, স্থানীয় একটি মহল ঈর্ষান্বিত হয়ে আমাকে হয়রানি করছে। আপনারা আরও খোঁজ নিয়ে দেখেন আমি ষড়যন্ত্রের শিকার।
স্কুলের নবনির্বাচিত সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন শিক্ষা ডটকমে জানান, স্কুলের শুরু থেকে শ্রম দিয়ে এ পর্যন্ত সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন ওই প্রধান শিক্ষক। একাধিক বিয়ে করা সেই শিক্ষকের ব্যক্তিগত ব্যাপার। তাই নেগেটিভ নিউজ করে প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করবেন না।
স্কুলের জমিদাতা ফাইজ উদ্দিন সরকার শিক্ষা ডটকমে বলেন, আমি জমি দিলেও স্কুলের জন্য শ্রম-অর্থ সবই দিয়েছেন এই প্রধান শিক্ষক জালাল। স্কুলের বাইরে কি করে সেটা আমরা জানি না, কিন্তু স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখতে জালাল উদ্দিনের ভূমিকা অতুলনীয়।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন শিক্ষা ডটকমে জানান, সরকারি অর্থ অন্যায়ভাবে ভোগ করার কোনো সুযোগ নেই। টাকা ফেরত দেওয়ার আগেই যেহেতু অভিযোগ পেয়েছি। তাই উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে তদন্তের নির্দেশনা দেওয়া হয়। আগামী সোমবার তদন্তকারী কর্মকর্তারা স্কুল পরিদর্শন করবেন বলে আমাকে জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, শিক্ষা ডটকমে ‘দুই সন্তানের বাবা সেজে শিক্ষা ভাতা নেন নিঃসন্তান প্রধান শিক্ষক’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। অভিযুক্ত শিক্ষক জালাল উদ্দিন গাজীপুরের সদর উপজেলার সিংড়াতুলি শহিদ আহসান উল্লাহ মাস্টার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধানের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি উপজেলার ভাওয়ালগড় ইউনিয়নের দরগারচালা গ্রামের মৃত আব্দুল্লাহর ছেলে।
0 Response to "শিক্ষা ভাতার টাকা ফেরত দিয়েছেন সেই নিঃসন্তান প্রধান শিক্ষক!"
Post a Comment