-->
সেই প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে সহকারী শিক্ষক

সেই প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে সহকারী শিক্ষক


গাজীপুরে প্রাইভেটকারের ভেতর থেকে উদ্ধার হওয়া শিক্ষক দম্পতির মৃত্যুর প্রকৃত কারণ এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। ওই ঘটনার ১৫ দিন পর নিহত প্রধান শিক্ষক জিয়াউর রহমান মামুনের কর্মস্থল টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পেয়েছেন ওই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক নুরুজ্জামান রানা। 

স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি মতিউর রহমান প্রতিষ্ঠানের সবার সঙ্গে আলোচনা করে নুরুজ্জামান রানাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধানের দায়িত্ব দেন।

নুরুজ্জামান রানা ১২ জুন ১৯৯৫ সালে সহকারী শিক্ষক ব্যবসা শিক্ষা হিসেবে ওই স্কুলে যোগদান করেন। তিনি পূর্ব আরিচপুর গ্রামের মৃত হানিফ মিয়ার ছেলে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে টঙ্গী শহীদ স্মৃতি স্কুলের পরিচালনা কমিটির সভাপতি মতিউর রহমান দুপুর আড়াইটার দিকে শিক্ষা ডটকমকে জানান, আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র পরিচালনা ও স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখতে আপাতত রানাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তার সহযোগী হিসেবে আরও চারজন শিক্ষককেও নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে সবার সঙ্গে আলোচনা করে যথাযথ নিয়ম অনুসরণের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, জিয়াউর রহমানের মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। তার স্থান পূরণ হবার নয়। কেননা তিনি শুধুমাত্র একজন দক্ষ শিক্ষকই ছিলেন না, একজন প্রকৃত মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ ছিলেন। 

দায়িত্ব পেয়ে মো. নুরুজ্জামান রানা শিক্ষা ডটকমকে বলেন, আজকের দিনে স্যারের কথা খুবই মনে পড়ছে। হয়তো উনার চেয়ারে আমার বসার যোগ্যতা নেই কিন্তু স্যারের আদর্শে উজ্জীবিত হয়েই স্কুলের কল্যাণে কাজ করে যেতে চাই।

জানা যায়, ১ সেপ্টেম্বর ২০২০ সালে টঙ্গী শহীদ স্মৃতি স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগাযোগ করেন জিয়াউর রহমান। এর আগে তিনি কালীগঞ্জের উনসই উচ্চ বিদ্যালয় ও নারায়ণগঞ্জের পুলিশ লাইনস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন। গত ১৮ আগস্ট তারিখে সস্ত্রীক তার রহস্যজনক মৃত্যু হলে প্রধান শিক্ষকের পদটি শূন্য হয়ে যায়। 

এদিকে এ ঘটনার অর্ধমাস পেরিয়ে গেলেও পুলিশ এখনো এর রহস্য উন্মোচন করতে পারেনি। রহস্য উদঘাটনের জন্য পুলিশ বিভিন্ন পরীক্ষা ও বিশেষজ্ঞ মতামতের ওপর ভিত্তি করে তদন্তের কাজ চালানোর চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষক দম্পতির পরিবারের বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তারা। এ ঘটনায় জড়িত এমন কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি। এখনো কোনো কিনারা করতে না পারার ফলে এ নিয়ে ওই শিক্ষকের দম্পতির কর্মস্থলের ছাত্র শিক্ষক অভিভাবক এবং দুই পরিবারের স্বজনদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। এ ঘটনায় বিচার চেয়ে মানববন্ধন করে নিহতদের স্বজন ও কর্মস্থলের সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা।

নিহত প্রধান শিক্ষকের ছোটভাই জিয়াউল ইসলাম রিপন শিক্ষা ডটকমকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর এখনো আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। আশা করছি, অতি দ্রুতই এ ঘটনার রহস্য উন্মোচিত হবে। তাই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার দাবি করছি। 

ইতোমধ্যেই শিক্ষক দম্পতির মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত করতে নমুনার রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য ঢাকার সিআইডি ল্যাবে পাঠানো হয়। লাশ দুটির ফুসফুস ও কিডনিতে জমাট রক্ত পাওয়া গেছে বলে প্রাথমিক পরীক্ষায় ধরা পড়ে। পুলিশ আশা করছে কয়েকটি বিষয়ের বিশেষজ্ঞদের মতামত পেলে তারা এ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারবেন।

এ বিষয়ে জিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার (ডিবি মিডিয়া) আবু সায়েম নয়ন যুগান্তরকে বলেন, পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া গেলে খুব সহজেই এ মৃত্যুর রহস্যের জট খুলে যাবে। মৃত্যুর কারণ জানতে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, পিবিআই, সিআইডি কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বিষাক্ত গ্যাস নিঃসরণের বিষয়টি মাথায় রেখেই আমরা তাদের ব্যবহৃত প্রাইভেটকারটি জব্দ করেছি এবং সংরক্ষণ করছি। গাড়িতে কোনো বিষাক্ত গ্যাস লিকেজ হয়েছিল কিনা তা আদালতের অনুমতি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে গাড়ির এসি এবং অন্যান্য যন্ত্রাংশ পরীক্ষা করা হচ্ছে। এ নিয়ে বিশেষজ্ঞ প্রতিবেদন পাওয়া গেলেই এ মৃত্যুর রহস্যের জোট খুলে যাবে।

প্রসঙ্গত, গত ১৮ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) ভোরের দিকে গাজীপুর মহানগরের টঙ্গীর বগারটেক এলাকার জয়বাংলা সড়কের পাশে একটি প্রাইভেটকারের ভেতর থেকে শিক্ষক দম্পতি টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি স্কুলের প্রধান শিক্ষক জিয়াউর রহমান মামুন ও তার স্ত্রী আমজাদ আলী স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা জেলি আক্তারের মরদেহ উদ্ধার করে গাছা থানা পুলিশ।

0 Response to "সেই প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে সহকারী শিক্ষক"

Post a Comment

Ads