শিক্ষিত কেউ এখন প্রাথমিক শিক্ষকদের বিয়ে করতে চান না
আগে সহকারী শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল পুরুষদের স্নাতক এবং নারীদের এসএসসি। কিন্তু নতুন নীতিমালায় সহকারী শিক্ষকদের নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতক করা হয়েছে। স্নাতক পাসে যোগ্যতা অনুযায়ী দ্বিতীয় শ্রেণির দশম গ্রেড পাওয়ার যোগ্য। অথচ যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সহকারী শিক্ষকেরা তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। নিম্নমানের বেতন-ভাতার কারণে উচ্চশিক্ষিতরা শিক্ষকতা পেশায় আসতে চান না। অথচ সমযোগ্যতায় অন্যান্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা দশম গ্রেডে বেতন পান। তাহলে প্রাথমিকের শিক্ষকের বেলায় এই বিমাতাসুলভ আচরণ কেন?
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শিক্ষকদের ‘ভিআইপি’ মর্যাদা দেওয়া হয় অথচ বাংলাদেশের শিক্ষকেরা তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। আর একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী থেকে দেশ ভালো কিছু আশা করতে পারে না। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু শিক্ষকদের ভাগ্যের চাকা ঘুরছে না। শিক্ষা খাতের উন্নয়নের জন্য সরকার অনেক কিছুই করছে। কিন্তু এই খাতের যাঁরা মূল চালিকা শক্তি, তাঁদের প্রতি অবহেলা করে কি সেই উন্নয়নের সুফল মিলবে?
প্রাথমিকের একজন প্রধান শিক্ষকের শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পাশাপাশি সব প্রশাসনিক কাজ করতে হয়। অথচ তাঁদের একাদশ গ্রেডে বেতন দেওয়া হয়। মাধ্যমিকের একজন সিনিয়র শিক্ষক নবম গ্রেডে বেতন পান আর প্রধান শিক্ষক সপ্তম গ্রেডে বেতন পান। অথচ প্রাথমিক শিক্ষকদের বেলায় বৈষম্য। প্রাথমিকের শিক্ষকদের একসময় যে সম্মান ছিল, সেটিও হারাতে বসেছি। কারণ, সরকার যেখানে আমাদের প্রতি এমন অবহেলা চালিয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর, সেখানে সমাজে কার ঠেকা আমাদের সম্মান করতে!
শিক্ষিত কেউ আজকাল প্রাথমিক শিক্ষকদের বিয়ে করতে চান না এটা ভেবে যে একজন শিক্ষক এই সামান্য বেতনে সংসার চালাবেন কীভাবে? শিক্ষকতা সম্মানের পেশা, কিন্তু তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী! এ অভিশাপ থেকে প্রাথমিকের শিক্ষকেরা মুক্তি চান। যোগ্যতা অনুযায়ী সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেড, প্রধান শিক্ষকদের নবম গ্রেড, সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অষ্টম এবং উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের সপ্তম গ্রেডে বেতন দেওয়া উচিত।
মানসম্মত শিক্ষা পেতে হলে অবশ্যই শিক্ষকদের বেতন–ভাতা বৃদ্ধি করতে হবে। যোগ্যতার মাপকাঠি সব স্তরে সঠিক রাখতে হবে, তবেই দেশ এগিয়ে যাবে। তাই প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেড এবং প্রধান শিক্ষকদের নবম গ্রেডে বেতন প্রদানের পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
মুন্নাফ হোসেন
সহকারী শিক্ষক
মমিনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
ধনবাড়ী, টাঙ্গাইল।
0 Response to "শিক্ষিত কেউ এখন প্রাথমিক শিক্ষকদের বিয়ে করতে চান না"
Post a Comment